ফার্মের মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা ও বাদামি ডিমের দাম ডজনে ১০ টাকা বেড়েছে এক সপ্তাহের ব্যবধানে।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারে ব্রয়লার মুরগি ও মুরগির ডিমের দাম বেড়েছে। তবে দাম কিছুটা কমেছে পেঁয়াজের। আর তিন সপ্তাহ ধরে সবজির দাম উচ্চ মূল্যে প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে।
এদিকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে যেসব সংঘর্ষ হচ্ছে, তার প্রভাব পড়েছে নিত্যপণ্যের বাজারে। এ নিয়ে শঙ্কা থাকায় অনেকেই বাসা থেকে বের হচ্ছেন না। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেওড়াপাড়া, মোহাম্মদপুর টাউন হল ও নিউমার্কেট বাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহখানেক আগে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ১৭০ টাকা। সোনালি মুরগির কেজি ২৮০ টাকায় অপরিবর্তিত রয়েছে। মাছের মধ্যে তেলাপিয়া, পাঙাশ ও রুই মাছের দাম কেজিতে ২০-৩০ টাকা বেড়েছে। গতকাল বিভিন্ন বাজারে এক থেকে দেড় কেজি ওজনের রুই ৩৫০-৩৬০ টাকা, পাঙাশ ২৮০ টাকা ও তেলাপিয়া ২৯০-৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হতে দেখা গেছে।
ফার্মের মুরগির বাদামি ডিমের দাম ডজনে ১০ টাকা বেড়েছে। এক সপ্তাহ আগে এই ডিমের ডজন ছিল ১৪০ টাকা, যা গতকাল ১৫০ টাকা বিক্রি হয়েছে। শেওড়াপাড়ার ডিম বিক্রেতা মো. সাব্বির আকন্দ বলেন, গত তিন দিনে পাইকারিতে প্রতি শ ডিমে ৮০ টাকার মতো দাম বেড়েছে।
ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বেড়ে যাওয়ায় বাজারে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। ১১ জুলাই বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ১১০-১২০ টাকা। গতকাল সেই পেঁয়াজ ১০৫-১১০ টাকায় কেনেন ক্রেতারা। অর্থাৎ কেজিতে দাম কমেছে ৫-১০ টাকা। বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজও একই দরে বিক্রি হচ্ছে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুসারে, গত এক বছরে বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম ৭৭ শতাংশ বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা জানান, গত কয়েক সপ্তাহে দেশজুড়ে ভারী বৃষ্টি ও বন্যা পরিস্থিতির কারণে সরবরাহে বিঘ্ন হয়েছে। এ ছাড়া ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানিও কম ছিল এত দিন; যে কারণে পণ্যটির দাম বেড়ে গিয়েছিল।
বাজারে এখনো কাঁচা মরিচের দাম অনেক বেশি। বাজারভেদে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ২৪০-৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গতকাল ঢাকার শেওড়াপাড়ায় ২৪০ টাকা, টাউন হলে ২৮০ টাকা ও নিউমার্কেটে ৩০০ টাকা কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হতে দেখা গেছে। বিক্রেতারা বলছেন, কাঁচা মরিচের সরবরাহ এখনো ঠিক হয়নি। আমদানিও সেভাবে বাড়ছে না। এ কারণে দাম কমছে না।
ভারী বৃষ্টি ও বন্যার কারণে বাজারে সপ্তাহ দুই আগে বিভিন্ন প্রকার সবজির দাম বেড়ে যায়। সেই অবস্থান থেকে দাম খুব একটা কমেনি। এখনো প্রতি কেজি বেগুন ও কাঁকরোল ১২০ টাকা, করলা ১৪০ টাকা, বরবটি ৮০-১০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ে এসব পণ্যের দাম ৫০-৭০ টাকার মধ্যে থাকে। এ ছাড়া চিচিঙ্গা, ধুন্দুল, লাউ ৮০-৯০ টাকা ও আলু ৫৫-৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে সবজির সরবরাহ এখনো স্বাভাবিক হয়নি।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। যে কারণে রাজধানীর শ্যামলী থেকে আজিমপুর পর্যন্ত সড়কের দুই পাশের সব ধরনের দোকানপাট ও বিপণিবিতান সারা দিন বন্ধ ছিল। তবে এসব এলাকার কাঁচাবাজারগুলো খোলা ছিল। কিন্তু ক্রেতা একেবারেই কম।
ব্যবসায়ীরা বলেন, থমথমে পরিস্থিতির কারণে সাধারণ মানুষ গতকাল সেভাবে বাইরে বের হননি। ফলে নিত্যপণ্যের বাজারেও ক্রেতার সংখ্যা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম ছিল। গতকাল দুপুরে নিউমার্কেট কাঁচাবাজারের বাবুল স্টোরের স্বত্বাধিকারী আবদুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, মানুষ ভয়ে বাজারে আসছেন না। সকাল থেকে হাতে গোনা ২০-২৫ জন ক্রেতা এসেছেন। সাধারণত দিনে এমন সময়ে শতাধিক ক্রেতা আসেন।
নিউমার্কেট কাঁচাবাজারে কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী মোতাহার হোসেনের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতে জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে অসুবিধায় আছি। এর সঙ্গে এখন ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বাজারে আসতেও ভয় করছে।’
Comments
Post a Comment